বিশেষ প্রতিবেদক : সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলাধীন দুটি ইউনিয়নের নিকাহ্ ও তালাক রেজিস্ট্রার পদটি শূণ্য হওয়ার পর ২২ মাসেও চুড়ান্ত হয়নি । ৩০কার্যদিবসের মধ্যে প্যানেল চুড়ান্ত করার কথা থাকলেও নিয়োগ কমিটির সদস্য, ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মইনুল হক চৌধুরীর ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে আইন বহির্ভূত নিয়ম ব্যবহার করার কারণে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া বার বার বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ভুমিকা নিয়েও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, নির্ধারিত কার্যদিবসের মধ্যে নিকাহ রেজিষ্ট্রার নিয়োগ সম্পন্ন না হলে যথাযথ কতৃপক্ষ বরাবরে আবেদন করতে হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
জানা যায়, অবসরজনিত কারণে ওসমানীনগর উপজেলার ৫ নং গোয়ালাবাজার ও ৬ নং তাজপুর ইউনিয়নের নিকাহ্ ও তালাক রেজিস্ট্রার পদটি শুণ্য হয়ে পড়ে। উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সচিব ও ওসমানীনগর উপজেলা সাব-রেজিস্টার বিধি-মোতাবেক ২০১৮ সালে ১০ অক্টোবর গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের ও ২০১৯ সালের ২ জুলাই তাজপুর ইউনিয়নের নিকাহ্ ও তালাক রেজিস্ট্রারের শূণ্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এতে দুই ইউনিয়নে প্রায় অর্ধশত প্রার্থী আবেদন করেন। বিধি মোতাবেক ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে নিয়োগ প্রার্থীদের মধ্যে মনোনীত ৩ জনের প্যানেল করে সরকারের নিকট প্রেরণ করার কথা থাকলেও ১ বছর ১০ মাসেও তা করা হয়নি।
স্মারক নং-২২৪(৬) এর আলোকে গত ৫ আগষ্ট সর্বশেষ সভার আহবান করা হয় এবং নিয়োগ কমিটির অন্যান্য সদস্যগণ উপস্থিত হয়ে তিন জনের প্যানেল গঠন করেন। কিন্তু নিয়োগ কমিটির সদস্য ও ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা ময়নুল হক চৌধুরীর ‘রহস্যজনক কারণে’ উপস্থিত না হওয়ায় তা চুড়ান্ত হয়নি বলে জানা যায়।
নিজের স্বার্থ সিদ্ধির উদ্দেশ্যে নিয়োগ কমিটির সদস্য ও ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইচ্ছাকৃতভাবে নিয়মের বাইরে গিয়ে নিকাহ তালাক রেজিস্ট্রার বিলম্ব করার উদ্দেশ্যে নানা ধরনের অপকৌশল ও নিয়ম বহির্ভূত প্রদক্ষেপ গ্রহন করার অভিযোগ উঠেছে। তিনি নিজের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য ও স্বার্থ সিদ্ধি হাসিলের উদ্দেশ্যে নানা অপকৌশল করছেন।
কোন ধরনের নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মইনুল হক চৌধুরী ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপে নিকাহ্ ও তালাক রেজিস্ট্রার নিয়োগের জন্য আবেদনকারী অর্ধশত প্রার্থীর নামে গত বছরের ২৯ডিসেম্বর ইং তারিখে পুলিশ ভেরিফিকেশনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। যা গত ২১ জুলাই ডিএসপি দপ্তর হতে ফেরত আসে। এতে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি আরো জটিল হয়ে উঠে। অন্যদিকে বিধি মোতাবেক প্রার্থীর বয়স ৪০ বছরের ভিতরে হতে হবে বলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ার কারণে অনেক প্রার্থীর বয়স চলে যাওয়ায় তারাও চিন্তিত হয়ে পড়ছেন! অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী কাজী নিয়োগ না হওয়ার কারণে বাল্যবিয়েরও প্রকোপসহ নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয় জনসাধারণ। যথা সময়ে এই দুইটি ইউনিয়নের নিকাহ্ ও তালাক রেজিস্ট্রার নিয়োগ না হওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত মানুষ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
এব্যাপারে নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও ওসমানীনগর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার বলেন,মো: ইউনুছ আলীর সাথে বারবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে গত ৫ আগস্ট তিনি ২৩৩নং স্মারকে জেলা রেজিষ্ট্রার বরাবর প্রেরিত আবেদননামায় জানিয়েছেন, ৫নং গোয়ালাবাজার ও ৬নং তাজপুর ইউনিয়নের শুণ্য নিক্াহ রেজিষ্ট্রার পদে নিয়োগ প্রদানের জন্য বিগত ১লা অক্টোবর ১৮ইং তারিখে গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের শূণ্য নিকাহ রেজিস্ট্রারের নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রেরণের সিন্ধান্ত হয় এবং তাজপুর ইউনিয়নের শূণ্য নিকাহ রেজিষ্ট্রারের নিয়োগের জন্য বিগত ২ জুলাই ১৯ইং তারিখে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রেরণ করা হয়। প্রাপ্ত আবেদনপত্র গুলি যাচাই-বাচাই করার জন্য বিগত ৮জুলাই ১৯ইং তারিখে স্মারক নং-২২৬(৫) নিকাহ রেজিষ্ট্রার সংক্রান্ত সভার আয়োজন করা হয়েছিল। অনিবার্য কারন বশতঃ সভা স্থগিত করা হয় ও বিগত ২৯ ডিসেম্বর ১৯ইং তারিখ সকাল ১০টায় উপজেলা চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে সভায় সিন্ধান্ত হয় যে, প্রাপ্ত আবেদন সমূহ পুলিশ যাচাই করে পরবর্তীতে সিন্ধান্ত হবে। পুলিশ যাচাই করে বিগত ২১জুলাই ২০ইং তারিখে ডিএসপি দপ্তর হইতে আবেদনগুলি ফেরৎ আসে। স্থানীয় সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বিগদ ৪আগষ্ট ২০ইং তারিখে তাজপুর সাব রেজিষ্ট্রারী অফিসে উপস্থিত হয়ে নিকাহ রেজিষ্ট্রার সংক্রান্ত সভা আহবান করার জন্য নির্দেশ দেন। তাহারই আলোকে উপজেলা চেয়ারম্যান এর দপ্তরে সভার আহবান করা হয় এবং কমিটির সদস্যগণকে পত্র দ্বারা অবহিত করা হয়। যাহার স্মারক নং-২২৪ (৬) তাং ০৪-০৮-২০২০ইং অদ্য ০৫-০৮-২০২০ইং তারিখে সভায় যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে জানা যায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসুস্থ বিধায় সভায় উপস্থিত হন নাই। শুধু গোয়ালাবাজার ও তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ উপস্থিত হন। তাই বিধান মোতাবেক সভার কার্য্যকর করা সম্ভব হয় নাই বিধায় সভাটি স্থগিত করা হয়।
ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ তাহমিনা আক্তার এর সাথে এব্যাপারে কথা বলতে চাইলে তিনি অসুস্থ্য রয়েছেন বলে জানান।
নিয়োগ কমিটির সদস্য ও ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ময়নুল হক চৌধুরীর সাথে মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সিলেট জেলা-রেজিস্ট্রার দ্বীপক কুমার সরকারের সাথে একাধিবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে রয়েছেন বলেই ফোন কেটে দেন ।